ঢাকা,রোববার, ১৯ মে ২০২৪

চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি: কমছে বানের পানি, বাড়ছে জনদুর্ভোগ : ভেসে উঠছে ক্ষতচিত্র

এম.মনছুর আলম, চকরিয়া ::
এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে টানা ভারি বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যার পানি বুধবার সকাল থেকে কমতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকাল থেকে বর্ষণ বন্ধ থাকায় বন্যার পানি ক্রমশ কমছে। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ভেসে উঠতে শুরু করেছে ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতচিহ্ন। এতে বানবাসি মানুষের বাড়ছে জনদুর্ভোগ। উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে এখনো পানিবন্দি অবস্থা রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক থাকায় বেশকিছু এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, পুকুর, চিংড়ি ঘেরসহ রোপা আমন ও শাকসবজির চিত্র ফুটে উঠে।

সপ্তাহ ধরে চলা টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা এলাকায় একশত ৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৪ লাখ মানুষ। প্রশাসন ও নিজস্ব উদ্যোগে বন্যা কবলিত অনেকেই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বানের পানি নামতে শুরু করলেও মানুষের বাসা-বাড়ির পানিবন্দি অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হলেও দুর্ভোগ সহজে পিছু ছাড়ছে না।

বর্তমানে উপকূলীয় ইউনিয়নের মধ্যে বদরখালী, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল এলাকার অন্তত ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্ধি রয়েছে। ওইসব এলাকায় বিভিন্ন বাড়ি ঘরে এখনো কোমর সমান পানি নিমজ্জিত। নিম্নাঞ্চলের বানবাসি মানুষ উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়কে তাবু টাঙিয়ে ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এছাড়াও হারবাং ও বরইতলী ইউনিয়নের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আছে। এতে পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন বিশ হাজার মানুষ। এসব বানবাসি মানুষের দুর্ভোগ চরমে। বন্যা কবলিত ওইসব এলাকায় তিনশতাধিক বাড়িঘর এখনো পানির নিচে রয়েছে। দুর্গত এলাকায় মানুষের বাড়ছে দুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যার পানি কমতে শুরু করে। বাসাবাড়ি থেকে পানি নামলেও এলাকার বিলে-মাঠে পানি থইথই করছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ির ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় পানিতে নিমজ্জিত থাকায় তাদের বাসা-বাড়িতে চলাচলের এখনো ভরসা নৌকা। পানি কমতে শুরু করায় বাড়িঘরে ফিরে আসছেন কেউ কেউ। অনেক ঘরে বেড়া, মাথার ওপর চাল, খাবার, ওষুধ কিছুই নেই। পুকুরের মাছ, খেতের ফসল সব তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় আমাশয়, ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের সঙ্গে চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটির গোড়ার মাটি সরে যাওয়ায় সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। এ কারণে অন্ধকারে আছেন অনেক বানভাসি। তবে লোকালয় থেকে পানি নেমে গেলেও নানা দূর্ভোগে পড়েছেন বানবাসি মানুষ। এরই মধ্যে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র, রাস্তার দ্ধারে আশ্রয় নেয়া লোকজন বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সড়কগুলো যান চলাচলের অনুপোযুগী হয়ে পড়েছে। নলকূপগুলো কয়েকদির ধরে পানিতে ডুবে থাকায় পানি উঠছে না। এতে চরম বিশুদ্ধ পানির ও খাবার সংকটে পড়েছে বন্যা কবলিত মানুষ।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদী ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের উদ্বৃতি দিয়ে জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে ঘর-বাড়িসহ রাস্তাঘাট। বানবাসি মানুষ খুব কষ্টে আছেন। সরকারীভাবে ও বেসরকারী উদ্যোগে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা খুবই অপ্রতুল। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ঠ বন্যায় চকরিয়া ১৮টি ইউনিয়ন ছাড়াও পৌরসভা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি কমলেও এখন ক্ষতির চিহৃ দৃশ্যমান হচ্ছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড চকরিয়া উপজেলার শাখা কর্মকর্তা (এসও) মো.জামাল মোর্শেদ বলেন, বন্যার তান্ডবে মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া উপজেলা অংশের ৩ স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙন স্থান দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকছে। যতো দ্রুত সম্ভব ভাঙনকৃত বেড়িবাঁধ এলাকা মেরামত করা হবে বলে জানান।
পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বাড়ছে দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ। বন্যার ফলে উপকূলের গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখনো বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে রয়েছে। চরম দুর্ভোগে রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, বন্যাকবলিত প্রত্যেক এলাকা নজরদারি করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার যাতায়াত স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চলছে। দুর্গতদের খাদ্য সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।
এদিকে বন্যাদূর্গত এলাকায় কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম, উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে জেপি দেওয়ান, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যার আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদীর নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরীর নেতৃত্বে পৌর প্রশাসন, সাবেক স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী জিয়াবুল হক, হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক, ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর ছাড়াও আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিগণ শুকনো খাবার, চাল-ডাল, রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন।

পাঠকের মতামত: